মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদন্ড !
বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচ অভিযোগের মধ্যে দুটিতে মৃত্যুদন্ড এবং আরেকটিতে আমৃত্যু কারাদন্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে ট্রাইব্যুনাল–-১ এর তিন সদস্যের প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষ ছিল জনাকীর্ণ। আইনজীবীদের পাশাপাশি জুলাই–অগাস্টে নিহত কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
রায় ঘোষণার আগে আদালতে অডিও, ভিডিওসহ তদন্তে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। সাক্ষ্য ও ঘটনার বিবরণ কেমন ছিল, তাও ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরা হয়।
জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে যে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলোর ধারাবিবরণী আদালতে তুলে ধরা হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কীভাবে প্রাণঘাতী গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়েছিল তার ভিডিও ও তথ্য পেশ করা হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকেও অংশবিশেষ আদালতে পড়ে শোনানো হয়। বেলা সোয়া একটার পর গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার বিভিন্ন টেলিফোন আলাপও ট্রাইব্যুনালে শুনানো হয়। এর কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে সে সময়ের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনও শুনানো হয়।
এই মামলার আরও দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল– মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে পলাতক, এবং দুজনই ভারতে অবস্থান করছেন।
একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। আর রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল –মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বরকে রায় ঘোষণার দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছিল।
প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যান্যরা।
গত ২৩ অক্টোবর মামলার চূড়ান্ত যুক্তি তর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাষ্ট্রনেতাদের বিচারের উদাহরণ তুলে ধরেন এবং শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবীর কিছু যুক্তির জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, এবং এরপর স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেনও পাল্টা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তার শাস্তি নির্ধারণ ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেয় প্রসিকিউশন। তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ মামুনের খালাস দাবি করেন।
৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৩ আগস্ট এবং ৮ অক্টোবর শেষ হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনা হয়।
তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়—উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা আট হাজার ৭৪৭। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদনটি চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয়।
