নাইম আইটি
https://www.nayemit.com/2021/12/science.html
বিজ্ঞানের অজানা রহস্য ২০২৪
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরসীম। কিন্তু এই বিজ্ঞানের রয়েছে নানান ধরণের মারপ্যাঁচ। আমাদের মনে বিজ্ঞানভিত্তিক অনেক প্রশ্ন জাগে যার সঠিক উত্তর খুঁজতে আমরা "কেন/কী" লিখে সার্চ করে থাকি। আজকে এই সকল বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। উন্মোচন করার চেষ্টা করবো আমাদের না জানা অনেক বিষয়।
ভয় পেলে লোম খাড়া হয় কেন?
মানুষ ভয় পেলে লোম খাড়া হয়ে ওঠে। আমরা অন্ধকার রাতে একাকী চলাফেরার সময় হঠাৎ কোনো শব্দ শুনলে আমাদের ভয়ের উদ্রেক হয়। মনে সাহস থাকলেও দেখা যাবে লোম খাড়া হয়ে উঠছে। গা কাঁটা দিচ্ছে। ভয়ের কারণে লোম খাড়া হয়ে ওঠে এবং গা কাঁটা দেয়। কিন্তু কেন ও কীভাবে? আমরা যখন ভয় পাই, তখন আমাদের স্নায়ুতে বেতার যন্ত্রের ন্যায় সাড়া পড়ে যায়। ঠিক বিপদ সংকেতের মতো। সাবধান হতে হবে। চোখের সামনে কেউ একটা লাঠি উচিয়ে সরিয়ে দিলে আমাদের চোখ কুঞ্চিত হয়ে পড়ে। গায়ে কাঁটা দেয় ও লোম খাড়া হয়ে ওঠা এ দুটোই হয় বিপদ থেকে রক্ষার স্বাভাবিক অভ্যাসের কারণে। আমাদের গায়ের লোম চামড়ার ভিতর দিয়ে বাঁকাভাবে বেশ খানিকটা স্তর পর্যন্ত নেমে গেছে। ভয় পেলে স্নায়ুতে স্নায়ুতে সাড়া পড়ে যায়, তখন এই স্নায়ুতন্ত্র কুঁচকে যায় এবং আমাদের গা খসখসে হয়। আমরা বলি গা কাঁটা দিচ্ছে। উল্টো দিক থেকে টান পড়ে বলে সঙ্গে সঙ্গেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।
দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম পায় কেন?
অনেকসময় দেখা যায় দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম ঘুম ভাব আসে। বিশেষ করে অফিসে চাকুরিজীবীদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। কিন্তু খাওয়ার পর ঘুম পায় কেন? আমরা দুপুরে এমন কী খাই যা ঘুমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়? আসলে দুপুরে ভাত, তরকারি বা রুটি যাই খাই না কেন আমাদের দুপুরের খাবারে কার্বোহাইড্রেট সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে দুপুরে যদি ভাত বা রুটির সাথে প্রোটিন খাওয়া না হয় তবে ঘুম ঘুম ভাব বেশি হয়। কেননা কার্বোহাইড্রেটের মূল কাজ হচ্ছে নিউরোট্রান্সমিটারের ব্যালান্স শিফট করা। সেখানে প্রোটিন সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও মানুষ দুপুরে প্রকৃতিগতভাবে ঘুমানোর জন্য তৈরি থাকে। মানুষের দেহ একটি দীর্ঘক্ষণের ঘুমের পাশাপাশি দুপুরে হালকা ঘণ্টা দুয়েকের ঘুম চায়। যা প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজন। মানুষ চাইলে দিনের মাঝে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টাও ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে; যেমন: বাদুড় দিনের বেলায় ঘুমায়। আমাদের প্রত্যেকের কমপক্ষে আট থেকে নয় ঘণ্টা রাতে ঘুমানো দরকার। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমায়। অনেকে যারা চাকরি করে, নানা কাজের কারণে রাতে ছয় ঘণ্টারও কম ঘুমাতে পারে। তাই আমাদের দেহের সচেতনতা ও শক্তি ফিরিয়ে আনার চাহিদাই দুপুরে ঘুম ঘুম লাগার পেছনে আরেকটি কারণ।
‘ডেড-সি’-তে মানুষ ডোবে না কেন?
সাগর দেখলেই আমাদের মনে একটি ভয় জাগে, যদি ডুবে যাই। কিন্তু এমন কোনো সাগর আছে কি যেখানে ডোবা যায় না। হুম, এরকম একটি সাগর হলো প্যালেস্টাইনের ‘ডেড-সি’। ডেড-সিতে ইচ্ছা করলে পানির ওপর শুয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা উপন্যাসও পড়া সম্ভব। এখানে ডোবার কোনো ভয় নেই। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত সাগরগুলোর একটি। এটি সবচেয়ে গভীর হাইপারস্যালাইন লেক। ডেড-সি’র নাম এমন হওয়ার পেছনে কারণ এ সাগরের তীব্র লবণাক্ততা। লবণাক্ততার জন্য কোনো প্রাণিই এতে বাঁচতে পারে না। ডেড-সি’ র লবণাক্ততা সাধারণ সমুদ্রের চেয়ে প্রায় ৯ গুণ বেশি। ডেড-সি’র পানি প্রায় ৩৩.৭% লবণাক্ত। ধারণা করা হয় এতে প্রায় ৪ কোটি টন লবণ দ্রবীভূত রয়েছে। যা ডেড-সি’র পানির ঘনত্ব সাধারণ পানির চেয়ে বাড়িয়ে দেয়। ফলে তা সাঁতার কাটার জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। ডেড-সি’র পানির ঘনত্বের চেয়ে কম ঘনত্বের যে কোনো কিছুই তাই ডেড-সিতে ভাসে। মানুষের শরীরের তরলের ৭০% অলবণাক্ত পানি। তাই মানুষের শরীরের তরলের ঘনত্ব ডেড-সি’র পানির চেয়ে কম। আমরা জানি কোনো বস্ত্ত যদি তার ওজনের সমান পানি অপসারণ করে তবে তা ভেসে থাকে। ডেড-সিতে বেশি ঘনত্বের লবণাক্ত পানির জন্য মানুষের সমআয়তন পানির ওজন শরীরের ওজনের চেয়ে বেশি। ফলে মানুষের সম্পূর্ণ শরীরই প্রায় ভেসে থাকে। এসময় ডেড-সি’র পানি থেকে শরীরের ওপর ঊর্ধ্বমুখী বল কাজ করে যা মানুষকে ভাসিয়ে রাখে এবং ঘোরা বা নড়াচড়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
হলদে দাঁত কীভাবে ঝকঝকে হবে?
অনেক সময় দেখা যায় চা, সিগারেট, কফি ইত্যাদি খাওয়ার ফলে দাঁত বেশ হলদে হয়ে যায়। সে দাগ ব্রাশ দিয়ে অনেক ঘষাঘষি করলেও সহজে যেতে চায় না। যা অনেক সময় বেশ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বেকিং সোডা দাঁতের এই হলদে দাগ দূর করতে বেশ সাহায্য করে। বেকিং সোডা মূলত সোডিয়াম বাই কার্বনেট হিসেবে পরিচিত। এটি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে আয়নিত হয়। যা দাঁতের এনামেল ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে। দাঁতের দাগের সাথে মিশে কার্বনের দ্বিবন্ধন ভাঙতে সাহায্য করে। যা দাঁতের দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং দাগ কমানোর মাধ্যমে দাঁতকে সাদা করে। অনেক বাণিজ্যিক হোয়াইটনার রয়েছে যা শুধু দাঁতকে চকচকে করে, প্রকৃতপক্ষে কোনো দাগ দূর করে না। বেকিং সোডা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার জন্য অল্প পরিমাণ বেকিং সোডা সামান্য পানিতে মিশিয়ে পেস্টের মতো বানিয়ে ঘষতে হবে। বেকিং সোডা নানারূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, তেমনি কৃত্রিমভাবে প্রস্ত্তত করাও সম্ভব। এর প্রাকৃতিক তরল রূপকে নাহকোলাইট বলে। আগে ইজিপ্সিয়ানরা নাহকোলাইটকে দাঁত পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করত। বিভিন্ন শাক-সবজি, ফলমূল পরিষ্কার করতেও বেকিং সোডা ব্যবহৃত হয়। নানা কেমিকেলের গন্ধ দূর করতেও বেকিং সোডা খুবই কার্যকর। খাবারের সাথে বেকিং সোডা অল্প পরিমাণ মিশিয়ে খেলে তা পেটের গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে।
যারা বর্ণান্ধ তারা আসলে কী দেখে?
পরিসংখ্যানানুযায়ী দেখা যায় ব্রিটেনে প্রায় প্রতি ১২ জন পুরুষের মাঝে একজন বর্ণান্ধ এবং ২০০ জন নারীর মাঝে একজন-অর্থাৎ শুধু ব্রিটেনেই প্রায় ২.৭ মিলিয়ন মানুষ বর্ণান্ধ যাদের বেশিরভাগই পুরুষ। বর্ণান্ধতার পেছনে নানা ধরনের কারণ আছে। তবে বেশির ভাগ মানুষের বর্ণান্ধতার কারণ বংশগত। যদিও কারো কারো ক্ষেত্রে বর্ণান্ধতার পেছনে ডায়াবেটিস, মেডিকেশন এবং বয়সের প্রভাবও দায়ী। বেশির ভাগ বর্ণান্ধ মানুষ সাধারণ মানুষের মতো পরিষ্কার দেখতে পায়। তারা শুধু লাল, নীল ও সবুজ আলো পুরোপুরিভাবে দেখতে পায় না। বিভিন্ন ধরনের বর্ণান্ধতা আছে তবে এক্ষেত্রে কেউ একদমই রং দেখতে পায় না এটা খুব বিরল ঘটনা। বর্ণান্ধতার সবচেয়ে সাধারণ রূপ হচ্ছে লাল ও সবুজ রং দেখতে না পারা। এক্ষেত্রে তারা শুধু লাল বা সবুজ রং মিশ্রিত করে ফেলে না, যেসব রঙে লাল বা সবুজ আছে সেসব রঙই মিশ্রিত করে ফেলে-অর্থাৎ একজন বর্ণান্ধ মানুষ নীল এবং বেগুনি রঙের মাঝে ঠিক পার্থক্য করতে পারে না। কারণ সে বেগুনির মাঝে উপস্থিত লাল রঙকে ঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে না। বর্ণান্ধতা সাধারণত মায়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
মোটকথা,বিশ্বয়কর এই মহাবিশ্বে আরও অনেক অজানা তথ্য ও রহস্য রয়ে গেছে ।
আমাদের জানতে হলে প্রচুর আগ্রহ এবং পড়াশোনা করার বিকল্প নেই ।
0 জন কমেন্ট করেছেন
Please read our Comment Policy before commenting.