নাইম আইটি https://www.nayemit.com/2022/01/kepler.html

কেপলারের চন্দ্র উপাখ্যান | বিজ্ঞানী কেপলার এর সূত্র

চাঁদ ২৭.৩ দিনে পৃথিবীর চারপাশে একবার ঘুরে আসে; আবার নিজের অক্ষের ওপরও একবার ঘোরে ২৭.৩ দিনে। এজন্যই পৃথিবী থেকে আমরা শুধু চাঁদের এক পিঠ দেখি, অন্য পিঠ কখনো দেখতে পাই না। আপাতদৃষ্টিতে এই যোগাযোগটা খুব আশ্চর্যজনক বলে মনে হয়। কিন্তু কারণটা বুঝলে এটা আর তেমন আশ্চর্যের ব্যাপার বলে মনে হবে না। আসলে বহু কোটি বছর ধরে পৃথিবীর টানে চাঁদের গায়ে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তার বাধার ফলেই চাঁদের নিজের অক্ষের ওপর ঘুরপাক খাবার ব্যাপারটা এমন খাঁজে খাঁজে মিলে গিয়েছে।
kepler

বিজ্ঞানী কেপলারের জীবনী

কেপলার মানুষ হিসেবে ছিলেন কিছুটা অদ্ভুত ধরনের। তাঁর মধ্যে একই সঙ্গে প্রাচীন আর আধুনিকের মিশেল ঘটেছিল। তিনি জ্যোতিষ শাস্ত্র দিয়ে লোকের ভাগ্য গণনা করে দিতেন। তবে তাঁর গণিতের মেধা ছিল অসাধারণ। আর সেকালের সেরা জ্যোতির্বিদ ডেনমার্কের তাইকো ব্রাহের শিষ্য হিসেবে কাজ করতে গিয়ে জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর বেশ দখল জন্মে যায়। তাইকো ডেনমার্ক আর সুইডেনের মাঝখানে হ্বিন (Hveen) দ্বীপে একটা মানমন্দির তৈরি করেছিলেন; তারপর সেখানে বিশ বছর ধরে গ্রহদের গতিবিধি খুব যত্নের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে তার বিবরণ লিখে রেখেছিলেন। ১৬০১ সালে হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হলে সেসব পর্যবেক্ষণ কেপলারের হাতে আসে। হিসেব-নিকেশ করে তিনিই প্রথম বুঝতে পারেন মঙ্গল গ্রহের যেসব পর্যবেক্ষণ পাওয়া গিয়েছে তা বৃত্তের মতো গোলাকার কক্ষপথ দিয়ে কিছুতেই ব্যাখ্যা করা যায় না। ছ’বছর ধরে হিসেব কষে তিনি প্রমাণ করলেন আসলে মঙ্গল, পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ সূর্যের চারপাশে বৃত্তের মতো পথে না ঘুরে কিছুটা লম্বাটে উপবৃত্তের মতো কক্ষপথে ঘোরে। তিনি যেসব গ্রহ গতির নিয়ম আবিষ্কার করেন তার প্রথম দুটি প্রকাশিত হয় ১৬০৯ সালে আর তৃতীয়টি ১৬১৮ সালে। এগুলো নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কারের পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

কেপলারের বই

এমন যে বিজ্ঞানী কেপলার তিনি চাঁদকে নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন; তার নাম ‘সোমনিয়াম’ অর্থাৎ স্বপ্ন। বইটা বেরোয় ১৬৩২ সালে, তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পর। এ বইয়ের নায়ক ডুরাকোটাস এক প্রেতের সাহায্য নিয়ে চাঁদে গিয়ে পৌঁছায়। কোন এক চন্দ্রগ্রহণের সময় যখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে তখন সেই ফাঁকে ছায়া বেয়ে বেয়ে প্রেত তাকে চাঁদে নিয়ে যায়। বইটা কাল্পনিক কাহিনী হলেও সে সময়ে চাঁদ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা যতটুকু জানতেন তাকে কেপলার কাজে লাগিয়েছিলেন। যেমন কেপলার জানতেন যে চাঁদের শুধু একটা দিকই আমরা দেখতে পাই কিন্তু তার অন্য দিক পৃথিবী থেকে কখনোই দেখা যায় না। তিনি লিখেছেন, চাঁদ এমন জায়গা যেখানে তাপমাত্রার প্রবল ওঠানামা ঘটে; আর সেখানে আছে বিশাল সব পর্বত আর গভীর খাদ। এসব কথা আজ প্রমাণিত হয়েছে। গ্যালিলিও চাঁদের গায়ে যেসব খাদের 
মতো জায়গা দেখেছেন, কেপলার বললেন সেগুলো তাঁর কাছে বরং জলা জায়গা বলে মনে হয়।

কেপলার কল্পনার রঙ ছড়িয়ে লিখেছেন, চাঁদের বাসিন্দাদের চেহারা নানা ধরনের। কিছু আছে সাপের মতো চেহারার; কিছু মাছের মতো ডানাওয়ালা─ তারা সমুদ্রে সাঁতরাতে পারে; কিছু চলে মাটিতে। অধিকাংশের গায়ে আছে ঘন লোম। তাদের কেউ যদি ভুল করে দুপুর রোদে খোলা জায়গায় আসে তবে সঙ্গে সঙ্গে তার লোম পুড়ে যায়, আর সেটা মরার মতো পড়ে থাকে। অবশ্য রাত হলে সেই পোড়া লোম খসে পড়ে আবার নতুন লোম গজায়। চাঁদের বাসিন্দারা অধিকাংশই বেশ ভাল সাঁতরাতে পারে; আর তারা দম নেয় খুব ধীরে ধীরে, তাই সহজেই পানির নিচে অনেকক্ষণ থাকতে পারে।

ইউরেনাস গ্রহের বৈশিষ্ট্য 

সেকালে চাঁদের মানুষদের নিয়ে এ ধরনের কাহিনী আরো অনেকেই লিখেছেন। তাতে বোঝা যায় চাঁদে যে মানুষজন আছে এ ধারণা বিজ্ঞানীদের মধ্যেও অনেকেই বিশ্বাস করতেন। এ ধরনের কথা লিখেছেন সেকালের বিখ্যাত বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেলও। এই শৌখিন জ্যোতির্বিদ নিজের হাতে তৈরি দূরবীন দিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করে ১৭৮১ সালে আবিষ্কার করেন ইউরেনাস গ্রহ; এর ফলে সৌরজগতের মানুষের চেনাজানা এলাকা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরপর তিনি হাজার হাজার যুগল তারা, তারার জোট আর নীহারিকা আবিষ্কার করেছেন। ছায়াপথ গ্যালাক্সির আকার সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা তিনিই প্রথম দেন। সে সময়ের সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে ভাল সব দূরবীন তিনিই তৈরি করেছিলেন। এমন যে হার্শেল তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, চাঁদে যে মানুষ আছে এটা ‘অবধারিত সত্য’। সেকালে অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করতেন চাঁদের ওপর ঘন বায়ুমণ্ডল আছে।

চাঁদের মানচিত্র

১৮৩৮ সালে বিয়ার ও মেডলার নামে দু’জন জার্মান বার্লিনে খুব যত্ন করে তৈরি চাঁদের একটি মানচিত্র প্রকাশ করলেন। তাতে তাঁরা বললেন চাঁদে কোন বায়ুমণ্ডল নেই, কোন রকম পরিবর্তনও নেই। চাঁদে উন্নত ধরনের জীব আছে এ ধারণা উনিশ শতকের মাঝামাঝি বাতিল হয়ে যায়। তবে সেখানে গাছপালা থাকতে পারে এমন ধারণা তারপরও বহুদিন টিকেছিল। কেবল এই শতাব্দীতে নভোযানে করে মানুষ চাঁদের ওপর নামার পরই স্পষ্ট বোঝা গেছে সেখানে কোন রকম প্রাণের চিহ্নমাত্র নেই।

চাঁদের কি নিজস্ব আলো আছে?

কিন্তু চাঁদের আলোটাই তো আসল কথা নয়। আসল কথা হল চাঁদ আমাদের পৃথিবীর সর্বক্ষণের সঙ্গী; সূর্যের চারপাশ দিয়ে পৃথিবীর চলার পথে কয়েকশ’ কোটি বছর ধরে চাঁদ রয়েছে আমাদের সাথে সাথে। চাঁদকে বাদ দিয়ে তাই পৃথিবীর কথা ভাবাই শক্ত। আর পৃথিবীর বাইরে একমাত্র যে জগতে মানুষ এযাবৎ যেতে পেরেছে সে হল এই চাঁদ। চাঁদের বুক থেকে মানুষ মাটি-পাথর তুলে এনেছে; সেসব গবেষণাগারে তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করে দেখেছে কী দিয়ে তৈরি চাঁদ, সেখানে কোন রকম প্রাণের চিহ্ন আছে কিনা - এমনি সব নানা বিষয়ে মানুষ জানার চেষ্টা করেছে। সেখানে কোনোরকম প্রাণের হদিস খুঁজে পাওয়া যায় নি, তবে জানা গেছে আরো অনেক নতুন খবর। আর সেসব খবর থেকে চাঁদ সম্বন্ধে মানুষের ধারণা আগের চেয়ে আজ অনেকখানি বদলে গিয়েছে। 

শেয়ার করলে মিষ্টি পাবেন

0 জন কমেন্ট করেছেন

Please read our Comment Policy before commenting. ??

পটেনশিয়াল আইটি কী?